Header Ads Widget

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত, মৃত্যুর সংখ্যা ২৩২ ছাড়ালো

 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ২৩২ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এই হামলায় গাজার বেশিরভাগ বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। 







ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলায় হামাসের কমান্ডার ও রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন 'নরকে বসবাস করছেন'। 



প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোজার মাস হওয়ায় অনেকেই সেহেরির সময় খাবার খাচ্ছিলেন, তখনই গাজায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। অন্তত ২০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে আকাশে উড়তে দেখা গেছে। এই হামলায় গাজার হাসপাতালগুলোতে বারবার হামলা চালানো হয়েছে, এতে সেখানকার বেশিরভাগ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। 



ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এই হামলা চালানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলার আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।


হামাস ইসরায়েলের এই হামলাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই হামলার ফলে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের এই আগ্রাসন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


গাজায় চলমান এই সংঘর্ষে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাদাগাদি করে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসব মানুষকে খাবার, পানি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই গাজার হাসপাতালগুলোতে বারবার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে সেখানকার বেশিরভাগ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন 'নরকে বসবাস করছেন'। অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় অত্যাসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে এর আগে জাতিসংঘের দেওয়া হুঁশিয়ারিই তাঁর বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। 

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ও সংঘর্ষ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) ও ইউনিসেফ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ ঠিক রাখতে মৌলিক পদক্ষেপে একটি পরিবর্তন আনা জরুরিভাবে প্রয়োজন। নিরাপদ ও দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিতে সীমান্তপথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। 


গাজার পাশাপাশি দখলকৃত পশ্চিম তীরেও অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। সেখানে পৃথক তিনটি ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। গত রোববার এসব ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সূত্র থেকে এএফপি এ তথ্য জানতে পেরেছে। 

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়তে দেখা গেছে। তখন থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান ও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় কমপক্ষে ৩৪৩ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর পশ্চিম তীরে ৫২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। 


এ ছাড়া লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তেও প্রাণঘাতী সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এক ইসরায়েলি সেনা ও তাঁর মা নিহত হয়েছেন। 

Post a Comment

0 Comments